Monday 8 April 2013

ফিনল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা - STUDY IN FINLAND

ফিনল্যান্ডে প্রতিবছর আফ্রিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর শিক্ষার্থী ব্যাচেলর, মাস্টার্স অথবা পিএইচডি করার উদ্দেশ্যে এসে থাকে। তবে তাদের বেশিরভাগই ব্যাচেলর প্রোগ্রামে। বিশেষ করে এখানে কোন ধরনের টিউশন ফি না থাকার দরুন অনেকেই এই সুযোগটি নেওয়ার চেষ্টা করে। এর আগে অবশ্য ফিনল্যান্ডে পড়াশুনা করার কয়েকটি ভাল দিক নিয়ে লিখেছিলাম। এর মানে এটা নয় যে এখানে কোন সমস্যা নেই। পড়ালেখার জন্য আসা একজন শিক্ষার্থী এখানে আসার পর কিছু কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। তবে বাংলাদেশের দৃষ্টিকোন থেকে খারাপ দিকগুলো অতটা ভয়াবহ মনে না হওয়ায় ফিনল্যান্ডে পড়াশুনা করার কিছু দরকারী তথ্য বিদেশে লেখাপড়া করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জানাতে আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। আজকে অবশ্য অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটিগুলোতে ব্যাচেলর প্রোগ্রামে ভর্তির ব্যাপারে মোটামুটি বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা পোষন করছি। তবে এখান থেকে উপকৃত হতে পারেন যারা মাস্টার্স অথবা পিএইচডি করতে ইচ্ছুক তারাও। বিষয় নির্বাচন ফিনল্যান্ডে ২৭ টি অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস (Applied Sciences) এবং ১৬টি জেনারেল বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। জেনারেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাচেলর ডিগ্রীর দু একটি প্রোগ্রাম ইংরেজীতে থাকায় এবং ভর্তি প্রক্রিয়া কঠিন বিধায় ভিনদেশী ছাত্র ছাত্রীদের ভর্তি হওয়ার সুযোগ একেবারেই কম। তবে কেউ যদি ফিনিশ (Finnish) ভাষায় পারদর্শী হয় তার জন্য অবশ্য প্রচুর সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটিগুলোতে ফিনিশ ভাষার পাশাপাশি ইংরেজী ভাষায়ও বেশ কয়েকটি ব্যাচেলর প্রোগ্রাম রয়েছে। ব্যাচেলর ডিগ্রীর উল্লেখযোগ্য কয়েকট প্রোগ্রাম হচ্ছে হিউম্যান এ্যাজিং এন্ড এল্ডার্লি সার্ভিস (Human Ageing & Elderly Service),ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস (International Business), প্লাস্টিক টেকনোলজি (Plastic Technology), ইনফরমেশন টেকনোলজি (Information Technology), এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Environmental Engineering), নার্সিং (Nursing), সোস্যাল সার্ভিস (Social Services), টুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট (Tourism & Hospitality Management), বিজনেস ইনফরমেশন টেকনোলজি (Business Information Technology) এবং ইলেকট্রোনিক্স (Electronics)। বিশ্ববিদ্যালয় ২৭ টি অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির মধ্যে ২৪ টিতে একাডেমিক লেখাপড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তন্মধ্যে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় রাজধানী হেলসিংকি এলাকায় অবস্থিত। সেগুলো হল আরকাডা (Arcada UAS), হাগা-হেলিয়া (Haaga-Helia UAS), হেলসিংকি মেট্রোপোলিয়া (Helsinki Metropolia UAS),ডায়াকনিয়া (Diaconia UAS) এবং লাউরিয়া ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস (Laurea UAS)। রাজধানী এলাকার বাইরে কাজকর্মের সুযোগ সুবিধা অনেক কম থাকায় সবারই লক্ষ্য থাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়া। অনেকে বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আসলেও পরবর্তীতে এক বা দুই সেমিস্টার পরে বৃহত্তর হেলসিংকির দিকে চলে আসে। প্রতি বছর বেশ কয়েকটি ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। হেলসিংকি অঞ্চলের মধ্যে যে ইউনিভার্সিটিগুলো বাংলাদেশে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবে ইউনিভার্সিটি পছন্দ করার ক্ষেত্রে ষেগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিবর্তন হতে পারে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানতে http://www.admissions.fi/ তে গিয়ে Degree Programmes এ অথবা admissions offices এ ক্লিক করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাবে। কোন রকম সমস্যা দেখা দিলে এখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সংগ্রহ করে গুগলে (Google) অনুসন্ধান করলে সহজে পাওয়া যেতে পারে। ভর্তি প্রক্রিয়া প্রতি বছর ফিনল্যান্ডের অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটিগুলোতে Autumn (আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর) এবং Spring (জানুয়ারী থেকে মে) সেমিস্টারে ব্যাচেলর ডিগ্রীতে ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করা হয়। ২০১১ সালের Autmn সেমিস্টারে ভর্তির আবেদনপত্র গ্রহন করা হবে আগামী বছর ৩ জানুয়ারী থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। ২০১২ সালের Spring সেমিস্টারে আবেদনের সময়সীমা ২০১১ সালের ২৯ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা http://www.admissions.fi/ তে অনলাইনে আবেদন করতে পারবে। মনে রাখতে হবে অনলাইনে আবেদনের পাশাপাশি এইসএসসি বা সমমান পরীক্ষার সনদপত্র (অবশ্যই ইংরেজীতে), ইংরেজী ভাষার যোগ্যতার (আইইএলটিএস বা টোফেল)সনদপত্রের ফটোকপি (স্ক্যানিং কপি গ্রহনযোগ্য নয়) ২৪ শে ফেব্রুয়ারীর মধ্যে পছন্দের তালিকার প্রথম ইউনিভার্সিটিতে ডাকযোগে অথবা হাতে হাতে পাঠাতে হবে। আবেদনপত্র যাচাই বাছাই শেষে Autumn সেমিস্টারের জন্য যাদের আবেদন গ্রহন করা হবে তাদেরকে ৪ এপ্রিল থেকে ৫ মের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য ভর্তি পরীক্ষার জন্য আমন্ত্রন জানানো হবে। ভর্তি পরীক্ষায় সাধারনত সাধারন গনিত, আই কিউ (IQ), অ্যানালিটিক্যাল কোয়েশ্চেন (Analytical Question) এবং বিষয় ভিত্তিক প্রশ্ন থাকে। ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল মে মাসের ৩০ তারিখে প্রকাশিত হবে এবং ফলাফল জুন মাসের প্রথম দিকে আবেদনকারীর যোগাযোগের ঠিকানায় পাঠানো হতে পারে। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইটেও ফলাফল পাওয়া যায়। ফলাফলের সাথে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ভর্তির জন্য Invitation letter ও Confirmation letter সংযুক্ত করা হয়। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য প্রাপ্ত Confirmation letter পূরণ করে অবশ্যই ২ আগস্টের মধ্যে স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডাকযোগে অথবা হাতে হাতে পাঠেতে হবে। অন্যথায় ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে না। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই Autumn সেমিস্টারের জন্য বাংলাদেশে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে। তাই Autumn সেমিস্টারের জন্য প্রয়োজনীয় তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ভর্তি প্রক্রিয়ার মধ্যে কোন তারতম্য নেই। ঢাকার বৃটিশ কাউন্সিল ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে। বৃটিশ কাউন্সিল নির্ধরিত রেজিষ্ট্রেশন ফি প্রদান সাপেক্ষে একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ দুইটি বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে। উল্লেখ্য ফিনল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোন ধরনের ফি দিতে হয় না। ভর্তি পরীক্ষার আমন্ত্রন পত্র পেলে পরীক্ষা সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্যের জন্য ঢাকাস্থ বৃটিশ কাউন্সেলে (British Council) যোগাযোগ করা যেতে পারে। ভর্তি যোগ্যতা অ্যাপ্লাইড সায়েন্স ইউনিভার্সিটিতে ব্যাচেলর প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার জন্য টোফেল (TOEFL) এ ৫৫০ স্কোর অথবা আইইএলটিএস (IELTS) এ কমপক্ষে ৬.০ স্কোরসহ এইসএসসি (HSC), এ-লেবেল (A-Level), আলীম বা এর সমমান ডিগ্রীধারী যেকোন ব্যক্তি আবেদন করতে পারে। ফিনল্যান্ডে ব্যাচেলর বা মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার জন্য বয়স কোন বাধা নয়। ফিনল্যান্ডের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিনিশ বা সুইডিশ ভাষায় পড়াশোনা করানো হয়। তবে ইংরেজি ভাষায়ও পড়াশোনা করা যায়। ইংরেজি মাধ্যমে পড়তে হলে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স উভয় প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে IELTS-এ ৫.৫ থেকে ৬.০ পেতে হবে অথবা TOEFL-এর CBT তে ১৭৩—২১৩ পয়েন্ট বা IBT তে ৬১—৮০ পয়েন্ট হতে হবে। অথবা সিএই বা সিপিইতে (ইউনির্ভাসিটি অব ক্যামব্রিজ অ্যাডভান্সড একজামিনেশন বা প্রোফেন্সি একজামিনেশন) এ, বি বা সি গ্রেড থাকতে হবে। ব্যাচেলর প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে বারো বছরের শিক্ষাজীবন অর্থাত্ এইচএসসি পাস হতে হবে এবং মাস্টার্স প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে ষোল বছরের শিক্ষাজীবন সম্পন্ন হতে হবে। ফিনল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্রিয়েটিভ রাইটিং, মিডিয়া স্টাডিজ, নর্থ আমেরিকান স্টাডিজ, ডেভোলেপমেন্ট স্টাডিজ, বায়োকেমিস্ট্রি, ফুড কেমিস্ট্রি, বায়োটেকনোলজি, ইকোলজি, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, বায়োডাইভারসিটি, অর্গানিক কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল অ্যানালাইসিস, ইলেকট্রনিকস, ইনফরমেশন টেকনোলজি, অ্যাপ্লাইড ম্যাথমেটিক্স, প্যাথলজি, ফরেনসিক কেমিস্ট্রি, ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহেভিলিটেশন, কম্পিউটার সায়েন্স, সার্জারি, নার্সিং সায়েন্স, সোশ্যাল পলিসি, পাবলিক হেলথ, মেডিক্যাল ফিজিক্স অ্যান্ড কেমিস্ট্রি, বিবিএ, এমবিএ, ল, ইতালিয়ান স্টাডিজ, কম্পিউটার সায়েন্স, ইলেকট্রনিকস ইনফরমেশন টেকনোলজি ইত্যাদি বিষয়ে পড়া যায়। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত টিউশন ফি লাগে না। তবে শিক্ষার্থীদের থাকা, খাওয়া, পোশাকসহ অন্যান্য খাতে একজন শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে প্রায় ৪০০ এবং চিকিত্সাসেবার জন্য বছরে ২৫—৭৫ মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হয়। আলাদাভাবে থাকতে গেলে ফ্ল্যাট বাড়িতে প্রতি মাসে খরচ হয় প্রায় ১১০—২০০ মার্কিন ডলার। ফিনল্যান্ডের যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক সেই প্রতিষ্ঠান থেকে আবেদনপত্র পেতে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে। অবশ্য কোনো কোনো ভার্সিটির অনলাইনে আবেদন করার সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া ফিনল্যান্ডের নির্ধারিত অফিস থেকেও আবেদনপত্র পাওয়া যাবে। আবেদনের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ চারটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চারটি বিষয় পছন্দ করতে পারে। তবে যেহেতু দুইটার বেশি বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়, সেই জন্য এক ও দুই নম্বর পছন্দের তালিকায় একটি বিষয় ও দুটি ভিন্ন ভিন্ন ইউনিভার্সিটি এবং তিন ও চার নম্বর পছন্দের তালিকায় আরেকটি বিষয় ও দুটি ভিন্ন ভিন্ন ইউনিভার্সিটি পছন্দ করলে ভর্তি হওয়ার সম্ভাব্যতা বৃদ্ধি পাবে। ভিসা প্রক্রিয়া ও ব্যাংক ব্যালেন্স বাংলাদেশে ফিনল্যান্ডের অ্যাম্বাসি না থাকায় ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ভিসার জন্য ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীস্থ ফিনিশ অ্যাম্বাসীতে (Embassy of Finland) আবেদনপত্র জমা দিতে হয়। ভিসা আবেদনপত্র http://www.migri.fi/ তে পাওয়া যায়। এখান থেকে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য নিরধারিত ফর্ম ডাউনলোড করে স্পস্ট অক্ষরে প্রয়োজনীয় তথ্য পুরন করতে হবে। ভিসা আবেদনপত্র জমাদানের সময় এসএসসি বা সমমান এবং এইসএসসি বা সমমান পরীক্ষার মুল সার্টিফিকেট ও মুল মার্কশীট, মূল বীমা (Insurance Paper) কপি, জন্মনিবন্ধন সনদপত্র, ইংরেজী ভাষার যোগ্যতার সনদপত্র (টোফেল অথবা আইইএলটিএস), ব্যাংক সার্টিফিকেট (Bank Certificate) ও তিন মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্টের (Bank Statement)মূলকপি দেখাতে হবে। আবেদনপত্র এবং অন্যান্য কাগজপত্রের ২ সেট ফটোকপি ভিসার জন্য নির্ধারিত সাইজের ৪ কপি ছবিসহ জমা দিতে হবে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের নিজ নামে খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬০০০ (ছয় হাজার) ইউরো সমমান টাকা এক থেকে তিন মাস পর্যন্ত গচ্ছিত রাখার প্রয়োজন হতে পারে। উল্লেখ্য ব্যাচেলর, মাস্টার্স এবং পিএইচডি সব প্রোগ্রামের জন্যই ভিসা প্রক্রিয়া একই রকম। এখন আসি টাকা-পয়সার ব্যাপারেঃ সাধারনত ফিনল্যান্ডে মাস্টার্সে ফান্ড পাওয়া যায় না (ইরাসমাস ব্যাতিত)। পি.এইচ.ডি এর জন্য ও ফান্ড পাওয়া বেশ কঠিন। কিন্তু এইখানে মাস্টার্স করার পর পি.এইচ.ডি'র জন্য আবেদন করলে সহজে ফান্ড পাওয়া যায়। এইখানের সুবিধা হইল যে কোন টিউশন ফী দেওয়া লাগে না (শুধু মাত্র আলতো বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া, ২ নং লিঙ্ক দ্রষ্টব্য, এইটাতে ২০১১- ২০১২ থেকে টিউশন ফি দিয়ে দিছে।মানে এই বছর যারা আসবে তাদেরকে দিতে হবে। বছরে ৮০০০ ইউরো! ) শুধু থাকা খাওয়ার খরচ নিজে ম্যানেজ করা লাগে। থাকা খাওয়ার জন্য মাসে গড়ে ৩৫০-৩৭০ ইউরো খরচ পড়ে। তবে শেয়ারে থাকলে খরচ অনেক কম পড়বে। # রুম ভাড়াঃ ২২০-২৪০ ইউরো # খাওয়াঃ ৮০-৯০ ইউরো # অন্যান্যঃ ২০-৪০ ইউরো এই খরচের হিসাবটা একজনের একা থাকার ক্ষেত্রে। শহর ভেদে কম-বেশি হতে পারে। থাকার জন্য স্টুডেন্ট এপার্টমেন্ট আছে। সাধারনত সবাই এটাতেই থাকে। আর স্টুডেন্ট এপার্টমেন্ট গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আশে পাশে হওয়াতে যাতায়াত খরচ নাই বললেই চলে। যেমন আমার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে বা নিত্যদিনের বাজার সদাই কিনতে কোন যাতায়াত খরচ লাগে না। কারন বিশ্ববিদ্যালয় বা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে হেটে যেতে ৪/৫ মিনিট। সবই খুব কাছাকাছি দুরত্তে। তারপরও মাসে ১০/১৫ ইউরো বাস কার্ডে খরচ হয়। আয়ের উৎসঃ এইখানে স্টুডেন্টরা পার্টটাইম কাজ করার সুযোগ পায়। সপ্তাহে ২৫ ঘন্টা। তবে নতুন অবস্থায় এসে কাজ পেতে সমস্যা হয়। তাই আমি বলবো প্রথমে আসার সময় ৬-৮ মাসের থাকা খাওয়ার খরচ নিয়ে আসা ভাল। পার্টটাইম কাজ সাধারনত ক্লিনিং কোম্পানি গুলোতেই হয়। কারন অন্যান্য কাজের জন্য ভাষাটা প্রধান সম্যসা। ফিনিশ ভাষা না জানলে অন্যান্য কাজ গুলো সাধারনত পাওয়া যায় না। আই.টি স্টুডেন্টদের আরেকটা সুবিধা আছে। ডেমলা নামে একটা ওরগানাইজেশন আছে, যারা বিভিন্ন সফটওয়্যার কোম্পানি থেকে প্রজেক্ট নিয়ে স্টুডেন্টদের দিয়ে করিয়ে থাকে। অনেকটা ফ্রিল্যানসিংয়ের মত। আর এইরকম কাজের অভিজ্ঞতা পরবর্তিতে জবের জন্য ভাল হয়। আমি বর্তমানে এইরকম একটা প্রজেক্টে কাজ করতেসি। এমনকি আপনার কোন একাডেমিক প্রজেক্টের ক্রেডিট এই প্রজেক্টে ঢুকাতে পারবেন। ডেমলার ব্যাপারে জানতে হলেঃ http://www.demola.fi/ আইটির জন্য ফিনল্যান্ড ভাল অপশন। জবের অবস্থাও ভাল। নকিয়া ছাড়াও অন্যান্য সফটওয়ার ফার্মে কাজ পাওয়ার ভাল সুযোগ আছে। প্রথম বছর হয়তো একটু কষ্ট হবে। কিন্তু নির্দিষ্ট পরিমান ক্রেডিট সম্পন্ন করার পর জব/ফান্ডিং ম্যানেজ হয়ে গেলে তখন আরাম-ই আরাম! আবার ৫০-৬০ ক্রেডিট সম্পন্ন করার পর টি.এ শিপের জন্য আবেদন করা যায়। আর টি.এ হলে মাস্টার্স থিসিস ও পরে পি এইচ ডি ফান্ডিং এর জন্য সুবিধা হয়। মাস্টার্স করতে দেড় থেকে দুই বছর আর ১২০ ক্রেডিট সম্পপন্ন করা লাগে। কিন্তু আপনি চাইলে বেশি সময় ও নিতে পারেন। চার বছরের মধ্যে শেষ করলে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় গুলো দুই বছরের মধ্যে করার জন্য রেকমেন্ড করে। আর পি এইচ ডি'র ক্ষেত্রে সময়টা সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর। মাস্টার্সে ভর্তির কয়েকটি সংক্ষিপ্ত তথ্য ফিনল্যান্ডের সবগুলো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ইংরেজী ভাষায় মাস্টার্স করার সুযোগ রয়েছে। অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটিগুলোতে মাস্টার্স বা এমবিএ করতে তিন বছরের চাকুরীর অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। কয়েকটি ইউনিভার্সিটিতে এমবিএ ছাড়া আর কোন মাস্টার্স প্রোগ্রামেই টিউশন ফি নেই। অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স বা এমবিএ প্রোগ্রামে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা http://www.admissions.fi/ থেকে ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে ঢুকে বিস্তারিত জানতে পারবে। অন্যদিকে জেনারেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশ কয়েকটি বিষয়ে মাস্টার্স করার সুযোগ রয়েছে। মাস্টার্সে ভর্তির জন্য অবশ্য বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। জেনারেল এবং অ্যাপ্লাইড সকল বিশ্ববিদ্যালয়েই মাস্টার্সে আবেদন করার নূন্যতম যোগ্যতা আইইএলটিএস (IELTS) ৬.৫ সহ ব্যাচেলর ডিগ্রী। জেনারেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য http://www.universityadmissions.fi/ তে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। পিএইচডি সম্পর্কিত কয়েকটি তথ্য ফিনল্যান্ডে পিএইচডি করতে হলেও ইংরেজী ভাষায় দক্ষতার প্রয়োজন হয়। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই পিএইচডি করতে আইইএলটিএস (IELTS) অথবা ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা প্রমানের যেকোন কোর্স সম্পন্ন করার দরকার হয়। আইইএলটিএস এ স্কোর সর্বনিম্ন ৬.৫। ফিনল্যান্ডে পিএইচডি করার জন্য সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে পছন্দের বিষয়ের কোন প্রফেসরের সাথে যোগাযোগ করলে আশা করি জবাব পাওয়া যাবে। পিএইচডি সম্পর্কিত অন্যান্য ব্যাপারে জানার জন্যও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের দ্বায়িত্বরত শিক্ষক বা কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। প্রয়োজনীয় তথ্য যেখানে পাওয়া যাবে অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটিগুলোতে ব্যাচেলর ডিগ্রীতে ভর্তির প্রয়োজনীয় সকল তথ্য http://www.admisions.fi/ এবং জেনারেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাচেলর বা মাস্টার্সে ভর্তির প্রয়োজনীয় সকল তথ্য http://www.universityadmissions.fi/ তে পাওয়া যাবে। এখান থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ঢুকে পিএইচডি সম্পর্কিত দরকারী তথ্যও জানা যাবে। ভিসার জন্য http://www.migri.fi/ থেকে দরকারী তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ছবি তোলার জন্য নিচের ওয়েবসাইটটিতে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা পাওয়া যাবে। Click This Link: http://www.poliisi.fi/poliisi/home.nsf/pages/AAF8DA6C2A3D663AC22570910026CA45 আপনি কোন পথে যাবেন? # আপনার যদি চাকুরি করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে মাস্টার্সই যথেষ্ঠ। এমনকি আপনি ৯০ ক্রেডিট সম্পন্ন করার পর, থিসিস করার পাশাপাশি জবের জন্য আপ্লাই করতে পারেন। # আর যদি আপনি একাডেমিক লাইনে থাকতে চান তাহলে, টি এ শিপটা আপনার জন্য ভাল। এটা নির্ভর করছে আপনার উপর। এইখানে কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটের লিঙ্ক দিলাম > ইউনিভার্সিটি সমুহ : Universities Aalto University Åbo Akademi University Hanken School of Economics Lappeenranta University of Technology Tampere University of Technology University of Helsinki University of Eastern Finland University of Jyväskylä University of Lapland University of Oulu University of Tampere University of Turku University of Vaasa University of the Arts Helsinki, consisting of: Academy of Fine Arts Sibelius Academy Theatre Academy Polytechnics - পলিটেকনিক Åland University of Applied Sciences Arcada Centria University of Applied Sciences Diaconia University of Applied Sciences HAAGA-HELIA University of Applied Sciences HAMK University of Applied Sciences Helsinki Metropolia University of Applied Sciences HUMAK University of Applied Sciences JAMK University of Applied Sciences Kajaani University of Applied Sciences Karelia University of Applied Sciences Kemi-Tornio University of Applied Sciences Kymenlaakso University of Applied Sciences Lahti University of Applied Sciences Laurea University of Applied Sciences Mikkeli University of Applied Sciences Novia University of Applied Sciences Oulu University of Applied Sciences Rovaniemi University of Applied Sciences Saimaa University of Applied Sciences Satakunta University of Applied Sciences Savonia University of Applied Sciences Seinäjoki University of Applied Sciences Tampere University of Applied Sciences Turku University of Applied Sciences Vaasa University of Applied Sciences ইউনিভার্সিটি এর সম্পূর্ণ ভর্তি প্রক্রিয়াটা এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হয়ে থাকে । http://universityadmissions.fi/ (এইটা একটা সেন্ট্রাল এডমিশন সাইট।) ফিনল্যান্ডে মাস্টার্সে ভর্তি হওয়া তুলনামূলকভাবে একটু কঠিন হওয়ায় এবং ব্যাচেলর ডিগ্রীতে ভর্তি হওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ ও আইইএলটিএস (IELTS) এ কম স্কোর প্রয়োজন হওয়ায় মাস্টার্সে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরাও ব্যাচেলর প্রোগ্রামের জন্য চেষ্টা করতে পারে। পরবর্তীতে ফিনল্যান্ডে আসার পর মাস্টার্সের জন্য নিজের ইচ্ছামত জায়গায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। ব্যাচেলর বা মাস্টার্স পাশ কেউ যদি ব্যাচেলর ডিগ্রীতে ভর্তির আবেদন করে সেক্ষেত্রে আবেদনপত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা এইসএসসি (HSC) উল্লেখ করতে হবে। আমার তথ্য গুলো বেশিরভাগই প্রকৌশল ও বিজ্ঞান বিষয়ের উচ্চতর শিক্ষার ব্যাপারে। তবে উপরের লিঙ্ক গুলোতে ব্রাউজ করলে আশা করি অন্যরাও রেলেভেন্ট জিনিস গুলো পাবেন। প্রতিবছর বংলাদেশ থেকে উল্লখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে ইউএসএ, বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমায়। বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া বা কানাডার প্রতি অধিকাংশ বিদেশ গমনেচ্ছু ছাত্র ছাত্রীদের আকাঙ্খা থাকলেও বিগত কয়েক বছরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে ফিনল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক ও জার্মানিতে বেশকিছু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর আগমন ঘটেছে। আজকে অবশ্য আমি ফিনল্যান্ডে পড়াশুনার ব্যাপারে কয়েকটি ভাল দিক নিয়ে কিছু কথা বলব। কেউ যদি সত্যিকার অর্থে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে বিদেশে আসতে চায় তাদের জন্য ফিনল্যান্ড হতে পারে একটা আদর্শ জায়গা। এখানে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য প্রচুর সুযোগ সুবিধা রয়েছে। তবে অনেকেরই এগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকায় এখানে আসার প্রতি তেমন একটা আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় না।

No comments:

Post a Comment